![]() |
শান্ত আর দুরন্তদেৱ কথা, বয়েলের নিয়ম,Boyle’s Law,স্মেলিং সল্ট,চালস্-এর নিয়ম |
আগের পর্ব - অণুর কথা - Discussion of molecules (Bangla)
শান্ত আর দুরন্তদেৱ কথা – বয়েলের নিয়ম - Discussion of Calm and Naughty – Boyle’s Law
কিন্তু অতো ছোটো হলে কী হয়, কতগুলো অণু দারুণ দুরন্ত যেন! দুরন্তপনার একটা প্রমাণ দিচ্ছি, শোনো। স্মেলিং সল্ট কাকে বলে জানো তো?
খুব ঝাঝালো গন্ধ ওয়ালা এক রকমের ওষুধ, হঠাৎ কেউ অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে শোঁকানো হয়। ঘরের এক কোণায় স্মেলিং সল্ট এর একটা শিশি মুখ খুলে রেখে দাও, একটু পরেই দেখবে পুরো ঘরটা তার গন্ধে ভরে গিয়েছে। কেমন করে তা সম্ভব হলো?
তা বুঝতে গেলে জানতে হবে গ্যাসের অণুদের হালচাল : তারা শান্তশিষ্টর মত চুপটি করে এক জায়গায় বসে নেই, সারাক্ষণ এদিক ওদিক দৌড়োদৌড়ি করছে। তাই, ঘরের বাতাস স্থির হয়ে থাকলেও ওই শিশির ভেতর থেকে গ্যাসের অণুগুলো লাফাতে লাফাতে বেরিয়ে পড়ে আর তারপর লাফাতে লাফাতে ছড়িয়ে পড়ে সারা ঘরময়।
অবশ্য সমস্ত অণুই এ-রকম দুরন্ত নয়। শুধু গ্যাসের বা বায়বীয় পদার্থের অণুদেরই এ রকম দুরন্তপনা। ঘন পদার্থের অণুদের হালচাল কিন্তু অন্যরকম। সব সময় এ-রকম লাফালাফি করা তো দূরের কথা, তাদের পরস্পরের মধ্যে এমনই টান যে একজনকে আর একজনের কাছ থেকে নড়ানোই দুষ্কর। তরল পদার্থের অণুদের মধ্যেও পরস্পরের প্রতি যেন ভালোবাসার টান আছে, কিন্তু এতো গভীর ভালোবাসা নয়। তাই তারা পরস্পরের কাছ ছেড়ে বেশিদূরে চলে যেতে রাজী হয় না বটে, কিন্তু একটু আধটু নড়াচড়া করতে রাজী হয়।
এইবারে বুঝতে পারবে, ঘন পদার্থের কেন আকৃতি আর আয়তন দুইই আছে, তরল পদার্থের কেন আকৃতি নেই, আর বায়বীয় পদার্থের না আছে চেহারা, না আছে আয়তন। ঘন পদার্থের অণুরা নড়াচড়া করতে নারাজ, তাই সবাই মিলে জোট পাকিয়ে ঘন পদার্থের যে-চেহারা তৈরি হয় তা আপনি আপনি বদলায় না। ঠ্যাঙালে (আঘাত করলে) তবে তারা নড়েচড়ে আর তাই তখন ঘন পদার্থের আকৃতি বদলায়। তরল পদার্থের অণুরা অমন ঠ্যাঙানি না খেলেও নড়াচড়া করতে পারে; তাই তরল পদার্থের নিজের আকৃতি নেই। তবু, এই অণুরা পরস্পরকে একেবারে ছেড়ে যেতেও নারাজ, তাই সবাই মিলে একজোট হয়ে মোট যতোখানি জায়গা জুড়ে থাকে তা বদলায় না অর্থাৎ, তরল পদার্থের নিজস্ব আয়তন থাকে। কিন্তু যা দুরন্ত বায়বীয় পদার্থের অণুগুলো-যে-কোনো পাত্রের মধ্যেই রাখো না কেন তারা লাফাতে লাফাতে সারা পাত্রময় ভরে যায়। তাই ওই বায়বীয় পদার্থগুলোর না আছে আকৃতি, না আছে আয়তন।
![]() |
শান্ত আর দুরন্তদেৱ কথা, বয়েলের নিয়ম,Boyle’s Law,স্মেলিং সল্ট,চালস্-এর নিয়ম |
একটা বেলুনের মধ্যে খানিকটা গ্যাস ভরে দাও। গ্যাসের অণুর তো আর শান্তশিষ্ট নয় তারা ক্রমাগতই বেলুনটার ভেতর দিকের দেয়ালে ধাক্কা মারতে থাকবে আর অনেক অণু একসঙ্গে এইভাবে ধাক্কা দেবে বলেই বেলুনটার ভিতর দিকের দেয়ালে ছাপ পড়তে থাকবে। খুব বেশি গ্যাস পুরলে এই চাপ এমন বেড়ে যাবে যে তার ফলে বেলুনটা যাবে ফেটে।।
এইবার ধরো, একটা কোনো পাত্রের মধ্যে খানিকটা গ্যাস প্রবেশ করালাম আর তারপর পাত্রের আয়তনটা ছোটো করে ফেললাম। তাহলে কী হবে?
জায়গা কমে যাবার দরুন গ্যাসের অণুরা নিশ্চয়ই খুব ঘেষাঘেষি হয়ে আসবে আর তাই পাত্রের ভেতর দিককার দেয়ালের ওপর তাদের চাপও যাবে বেড়ে। পাত্রের আয়তন যে-হারে কমবে ভেতরকার গ্যাসের চাপ সেই হারে বাড়বে আর পাত্রের আয়তন যে হারে বাড়বে ভেতরকার গ্যাসের চাপ সেই হারে কমবে। পাত্রের আয়তন যদি অর্ধেক করে দাও তাহলে গ্যাসের চাপ দ্বিগুণ হয়ে যাবে, আয়তন যদি দ্বিগুণ করে দাও গ্যাসের চাপ হবে অর্ধেক। এই যে নিয়ম, এর নাম হলো বয়েল-এর নিয়ম, কেননা যিনি এই নিয়মটা বের করেছিলেন তাঁর নাম ছিলো রবার্ট বয়েল (Boyle)।
কিন্তু পাত্রের আয়তন ছোটো না করেও অন্য একটা উপায়ে গ্যাসের চাপ বাড়ানো যায়। গ্যাস-ভরা পাত্রকে খানিকটা তাতিয়ে নাও, তাহলে তো ভেতরকার গ্যাসটাও গরম হয়ে উঠবে। আর তুমি দেখবে গ্যাস যত গরম হচ্ছে ততই বেড়ে যাচ্ছে তার চাপ। এই নিয়মটা বের করেছিলেন চার্লস (Charles) নামে একজন বৈজ্ঞানিক, তাঁর নাম থেকেই নিয়মটার নামকরণ হয়েছে চালস্-এর নিয়ম। কিন্তু কথা হলো, গ্যাস গরম করলেই তার চাপ কেন বেড়ে যায়? তার কারণ, গ্যাসের অণুরা যতো গরম হয়ে ওঠে ততই বেড়ে যায় তাদের ছুটোছুটি আর তাই পাত্রটার গায়ে তারা ততোই জোরে জোরে ধাক্কা দিতে থাকে—এই ধাক্কার চোটেই চাপটা বেড়ে যায়।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন