বকুল ফুল – বৃক্ষের কথা – হুমায়ূন আহমেদ - Bokul ful – Brikkher kotha – Humayun Ahmed |
বকুল ফুল – বৃক্ষের কথা – হুমায়ূন আহমেদ - Bokul ful – Brikkher kotha – Humayun Ahmed
আমার জন্যে বকুল নস্টালজিক গাছ। সিলেটের মীরাবাজারে প্রকাণ্ড একটা বকুলগাছ ছিল। আম-কাঁঠালের ছুটির আগের দিন আমি বকুল ফুল কুড়াতে যেতাম। বকুল ফুলের মালা, মুড়ির মালা স্কুলের শিক্ষকদের উপহার দেবার রীতি ছিল। মৃত মানুষদের ছবিতেও বকুল ফুলের মালা ঝুলত। আমার এক ফুপু অল্পবয়সে মারা গিয়েছিলেন। আমাদের বসার ঘরে বিখ্যাত সব মানুষদের (রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, জর্জ বার্নাডশ...) ছবির পাশে ফুপুর একটা ছবিও ঝুলত। ছবির সঙ্গে বকুল ফুলের মালা। বকুল এমন এক পুষ্প, যা শুকিয়ে গেলেও গন্ধ বিলায়।
নস্টালজিক এই ফুলের প্রভাব এখনো আমার মধ্যে আছে। আছে বলেই “আমার আছে জল' ছবির গান লিখতে গিয়ে লিখলাম--
কন্তু না প্রণয়
ভালোবাসাবাসি।
অশ্রু সজল
কত হাসাহাসি।
বকুল গন্ধ রাতে।
যাই হোক,
বকুলের সংস্কৃত নাম মদন।। প্রাচীনকালে বকুল ফুল থেকে অতি উৎকৃষ্ট মদ তৈরি হতো। শিবকালী ভট্টাচার্য লিখছেন-- চরকের সূত্র স্থানের ২৫ অধ্যায়ে আসব-যোনির মধ্যে অর্থাৎ ‘ফলজাত যত প্রকার মদ্য শ্রেষ্ঠতার স্থান দখল করে তাদের মধ্যে বকুল ফলজাত মদ্য অন্যতম।’
বকুল ফুলের মদ তৈরির একটি প্রক্রিয়া জানাচ্ছি। আবগারী বিভাগ খবর না পেলেই হলো।
পাকা বকুল ফুল থেকে খোসা এবং বীজ সরিয়ে ফেলতে হবে। এর সঙ্গে মেশাতে হবে মধু কিংবা গুড়। ফার্মেনটেশনের জন্য পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে তিনদিন। ন্যাকড়ায় পুটলি বেঁধে ঝুলিয়ে দিতে হবে। ফোটা ফোটা যে বস্তু পড়বে তাই উৎকৃষ্ট মদ। নাম দেয়া যাক— Bakul White Wine of Bengal.
বকুল ফুলের ঔষধি ব্যবহার
শুক্রতারল্যে : বকুল ফুলের মদ। প্রত্যহ সেব্য। (শিথিলতায়)।
প্রোস্টেড গ্ল্যান্ড সমস্যায় : ঐ।
ছোট্ট একটা তথ্য দিয়ে লেখা শেষ করছি। আমার মা কিশোরী বয়সে এক হিন্দু কিশোরীর সঙ্গে বকুল ফুল পাতিয়েছিলেন। অর্থাৎ সই পাতিয়েছিলেন। এই সইয়ের কাছে আমি মাতৃ আদর সবসময় পেয়েছি। সই পাতাতে সবাই বকুল ফুলের নাম নেয় কেন? আজ পর্যন্ত কাউকে পাই নি যে সইয়ের সঙ্গে পদ্মফুল বা গোলাপফুল পাতিয়েছে।
বকুলের বৈজ্ঞানিক নাম Mimusops elegiLinn. পরিবার হলো Sapotaceae.
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন