বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১

Matter cannot be destroyed - পদার্থের ধ্বংস নেই

 

Matter cannot be destroyed, পদার্থের ধ্বংস নেই

পদার্থের ধ্বংস নেই

তাহলে এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের যেখানে যা-কিছু আছে সবই হলো পদার্থ। আর, প্রত্যেক পদার্থরই কিছু না কিছু ভর আছে। এখন হিসেব করলে বেরিয়ে যায় সমস্ত জিনিস মিলে সবশুদ্ধ যতোখানি ভর তা কোনোমতেই একটুও বাড়ে না, একটুও কমে না। যেমন ধরো, এক সের চিনি থেকে তুমি আধসের চিনি নিয়ে চিনির সরবত করে খেয়ে নাও; তাহলেও কিন্তু ওই আধসের চিনি বাবদ যতোখানি ভর তা পৃথিবী থেকে কমে যাবে না। কেননা চিনিটার ভর আধসের কমলেও তোমার ভর তো আধসের বাড়লো। তাই তুমি আর চিনি মিলে আগেও মোট যতোখানি ভর পরেও ততোখানিই। কিংবা ধরো, আধসের পুরোনো খবরের কাগজ পুড়িয়ে ছাই করে ফেললাম--ছাইটার ওজন তো আর আধসের হবে না, তার চেয়ে অনেক কম। আর যেহেতু আগেই দেখেছো, এই ওজন বলে ব্যাপারটা ভরের ওপরই নির্ভর করছে সেই জন্যে নিশ্চয়ই মনে হতে পারে কাগজটাকে পুড়িয়ে ফেলবার পর তার মধ্যে থেকে অনেকখানি ভর নষ্ট হয়ে গেলো। আসলে কিন্তু তা মোটেই নয়। কাগজ পুড়িয়ে যে-ধোয়া হলো সেই ধোঁয়াটার হিসেব কে রাখবে? পরীক্ষা করে দেখতে চাও? বেশ। একটা পাতলা কাচের বোতল যোগাড় করো। ছবিতে যে-রকম কাঁচের বোতল দেখছো সেই রকম হলেই ভালো হয়, ওগুলোকে বলে ফ্লাস্ক। বোতলটার মধ্যে খানিকটা কাগজ পুরে ভালে করে ছিপি এটে দাও, যাতে একটুও ধোয়া বেরুবার পথ না থাকে। তারপর, ভালো নিক্তিতে সবশুদ্ধ, ওজন করে নাও, খাতায় লিখে রাখো ওজনটা কতো হলো। তারপর, আতসী কা দিয়ে সূর্যের আলো কাগজটার ওপর ফেলে কাগজটায় আগুন ধরিয়ে দাও। কাগজটা পুড়ে ছাই হয়ে যাবে। তারপর, সবশুদ্ধ, আবার নিক্তিতে চাপিয়ে ওজন করো। খাতার সঙ্গে মিলিয়ে দেখো। দেখবে, আগে যা ছিলে ঠিক তাইই রয়েছে। কিংবা, আর একটা পরীক্ষার কথা বলি। ওই রকমেরই একটা কাঁচের ফ্লাস্ক-এর মধ্যে খানিকটা নাইট্রিঅ্যাসিড (Nitric acid) নাও। ফ্লাস্কটার মুখে ছিপি এঁটে নিক্তির একদিকে বসাও আর তার পাশেই একটা পয়সা রাখো। এইবার দেখো সবশুদ্ধ, ওজন কী হলো। ওজনটা খাতায় টুকে রাখো। তারপর, ছিপি খুলে পয়সাটা সাবধানে ফ্লাস্ক-এর মধ্যে ঢুকিয়ে দাও - সাবধানে ফেলো, নইলে ফ্লাস্ক-এর তলা ফেঁটে যাবে। দেখবে রঙীন গ্যাসের বুড়বুড়ি উঠতে উঠতে পয়সাটি এ্যাসিডের মধ্যে কোথায় উপে গেলো। তারপর আবার ওজন করো--দেখবে আগে যা ছিল, ঠিক তাইই আছে। ছিপি খোলো, দেখবে ফ্লাক্ক-এর ভেতর থেকে খানিকটা গ্যাস বেরিয়ে হাওয়ার সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। আবার ওজন নাও, দেখবে এইবার ওজন সত্যিই কমেছে।

তাহলে পরীক্ষায় যতো খুশি গোল্লা খাও না কেন পণ্ডিতদের বলা উচিত ছেলেটা একটুও অপদার্থ হয়ে যাচ্ছে না!

তাহলে পরীক্ষা দুটো থেকে ঠিক কী প্রমাণ হলো? এই কথাই কি প্রমাণ হলো না যে, পদার্থের রূপ বদলাতে পারে, কিন্তু পদার্থ ধ্বংস হয় না! ছিলো কাগজ, হয়ে গেলে ছাই আর ছিলো তামার পয়সা, হয়ে গেলো গ্যাস। অর্থাৎ আগেও যতোখানি পরেও ঠিক ততোখানিই। 

পরের পর্ব - কুড়েৱ বাদশা (নিউটনের গতি ও সরণের তিনটি সুত্র এবং পদার্থ )


মূল লেখকঃ দেবীদাস মজুমদার
লেখার সময় কালঃ ১৯৬০ সাল
নতুন আঙ্গিকে লেখা, সম্পাদনা, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনঃ  মারুফ মাহমুদ, ঢাকা কলেজ 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন