বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১

ওজন কমানো ও বাড়ানোর সহজ উপায় - ওজন ও ভর নিয়ে মজার আলোচনা

পদার্থ, অপদার্থ আর মাধ্যাকর্ষণ শক্তি নিয়ে আগের লেখার পর থেকে শুরুঃ 


ওজন কমানো ও বাড়ানোর সহজ উপায় - ওজন ও ভর নিয়ে মজার আলোচনা

ওজন কমানো ও বাড়ানোর সহজ উপায় - ওজন ও ভর নিয়ে মজার আলোচনা

ধরো আমাদের আদী তার রাঙা মামার কাছ থেকে ওইরকম অপমানকর ব্যবহার পেয়ে ঠিক করল- সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে শুধুই লেখা পড়া করবে। সে কি দারুন লেখাপড়া - বাড়া ভাত ঠান্ডা হয়ে যায়, ঠান্ডা ভাত খেতে ভুলে যায়, রাত নেই, দিন নেই, শুধু লেখাপড়া। লেখাপড়া করতে করতে আমাদের আদি একেবারে কাঠিসার হয়ে গেল তাই তার ছোট মামা তাকে বলল, তুমি এক কাজ কর, একটু হাওয়া বদল করে এসো, ওজন বাড়াতে হবে।

কিন্তু কথা হল ওজন বাড়াতে কোথায় যাওয়া যায়? যদি ছোট মামা আগে থেকে পদার্থবিজ্ঞান পড়ে রাখত তাহলে হয়তো সুমেরু বা কুমেরুতে যাওয়ার কথা বলত। কেননা সেখানে পৌছানো মাত্রই সবকিছুর জন আপনা আপনিই বেড়ে যাবে। যেমন ধরো, তুমি একসের চিনি তোমার বাসায় ওজন করে একটা বাকসে ভরে তারপর রওয়ানা দিলে সুমেরু কিংবা কুমেরুর দিকে।  সেখানে পৌছেই দেখবে চিনির ওজন একসের এর চেয়ে কিঞ্চিত বেশি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে যদি চিনিটাকে বিষুবরেখার কাছের কোন এলাকায় নিয়ে যাও তাহলে দেখবে চিনির ওজন কিঞ্চিত কমে গিয়েছে।
তোমরা হয়তো জানতে চাইবে এ আবার কোন ধরনের আজব কথা। আসলে পদার্থবিদ্যার জ্ঞান থাকলে বুঝতে এটা কোন আজব বিষয় নয়।
তোমরা কি ভেবে দেখেছ ওজন কাকে বলে বা এটা কি?  আবার এক এক জিনিসের ওন এক এক রকম হয় কেনো? আসলে বিষয়টা হল মাধ্যাকর্ষণ এর কারনে পৃথিবী সব পদার্থকেই নিজের দিকে টানছে। কিন্তু সবাইকে সমান জোরে টানছে না। যে জিনিসটাকে যত জোরে টানে সে জিনিসটার ওজনও তত বেশি। তার মানে একবাক্স তুলোর চেয়ে একবাক্স লোহার দিকে পৃথিবীর টান অনেক বেশি। আর তাই লোহার বাক্সটার ওজনও বেশি। এখন সুমেরু আর কুমেরুতে সব জিনিসের দিকে পৃথিবীর টান অনেক বেশি, বিষুবরেখার কাছে কম। তাই বিষুবরেখার তুলনায় সুমেরু আর কুমেরুতে সব জিনিসেরই ওজন বেশি।
তা নাহয় বোঝা গেল, কিন্তু প্রশ্ন হল, লোহার বাক্সটার দিকেই পৃথিবীর টান বেশি কেন, আর তুলোর বাক্সটার দিকেই বা কেন কম? এর কারন হল লোহার বাক্সটার "ভর- mass" অনেক বেশি, তুলোর বাক্সের ভর অনেক কম। আর ভর যত বেশি তার ওজনও তত বেশি।
আসলে একটা জিনিসের মাঝে ঠিক যতখানি পদার্থ আছে ততটাই হল তার ভর। এক বাক্স লোহার মাঝে এক বাক্স তুলোর চেয়ে পদার্থ অনেক বেশি আর তাই লোহার ভরও তুলোর চেয়ে অনেক বেশি।
কিন্তু সাবধান! "ভর" কথাটা শুনতে অনেকটা ভারী শব্দটার মতই লাগে। কিন্তু এ দুটোর মাঝে অনেক তফাত। যেমন তফাত রাম আর রামছাগলের মাঝে।

কোন কিছুর ভর এক জিনিস আর ওজন অন্য জিনিস। যেমনঃ ধরো, এক বোতল চিনি নিয়ে সুমেরু বা বিষুবরেখার কাছে গেলে তার ওজন যথাক্রমে বেড়ে ও কমে যাবে। কিন্তু বোতলের চিনি ঠিক ততখানিই আছে অর্থাৎ তার ভর অপরিবর্তনীয় রয়েছে। অন্য দিকে তার ওজন দুই স্থানে দুই রকম রয়েছে। তারমানে ওজন আর ভর দুটো আলাদা বিষয়। তবে হ্যা এই ভরের উপরেই ওজন নির্ভর করে। কিংবা ধরো, পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ এর কথা। এখানে মাধ্যাকর্ষণ এর শক্তি অনেক কম। তাই সেখানে জিনিসপত্রের ওজনও কম। আদির মামা যদি তাকে হাওয়া বদলের জন্যে চাঁদে নিয়ে যেতেন তাহলে ফল হতো উলটো। আদিরও ওজন কমে যেত এমনকি তার মামারও। তবে আদির দেহে বা তার ছোট মামার দেহের পদার্থের কোন পরিবর্তন হত না। ছোট মামার দেহের ওজন যদি পৃথিবীতে ১০০ কেজি হয় তবে চাঁদে তার ওজন হবে মাত্র ১৬.৫ কেজি অর্থাৎ পৃথিবীর ওজনের ৬ ভাগের একভাগ। পৃথিবী ও চাঁদ দুই স্থানেই দুজনের ভর একই থাকতো। তবে একটা কথা তোমাদের কারো ঘাড়ে জীন-ভূত ভর করলেও তার ওজন বাড়বে না কারন জীন ভূতের কোন ভ নেই।

পরের পর্ব 

মূল লেখকঃ দেবীদাস মজুমদার
লেখার সময় কালঃ ১৯৬০ সাল
নতুন আঙ্গিকে লেখা, সম্পাদনা, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জনঃ  মারুফ মাহমুদ, ঢাকা কলেজ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন