বৃহস্পতিবার, ৩ জুন, ২০২১

গল্পে গল্পে পদার্থ, অপদার্থ ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি

 

গল্পে গল্পে পদার্থ, অপদার্থ ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি

গল্পে গল্পে পদার্থ, অপদার্থ ও মাধ্যাকর্ষণ শক্তি 
আমাদের আদি লেখা পড়ার ধার ধারে না, ডাং-গুলি খেলে দিন কাটায়। বেচারা তাই পরীক্ষায় গোল্লা খেলো। খবর শুনে আদির রাঙা মামা তাই রেগেই আগুন। তার বাঁ কানটায় তিনপাক দিয়ে বললেন, অপদার্থ কোথাকার?
লেখা পড়া না করার এই হল বিপদ। এমনি অপমানজনক গালাগাল মুখ বুজে হজম করতে হয়। আদি যদি আগে লেখা পড়া মনযোগ দিয়ে করতো আর আর একখানা পদার্থ বিজ্ঞানের বই পড়ে রাখতো, তাহলে নিশ্চই রাঙা মামাকে হতভম্ব করে বলে দিতে পারতো, মোটেই নয়, ছেলেমানুষ কখনো অপদার্থ হয় না। সে আবার কোন ধরনের কথা? তাহলে কি শুধু মেয়েরাই অপদার্থ হয় নাকি? তাও নয়। কেউই নয়। কোন জিনিসকেই অপদার্থ বলা চলবে না। ছেলেরাও নয়, মেয়েরাও নয়, পড়ুয়ারাও নয়, ডাং-গুলি খেলোয়াড়ও নয়, মাটিও নয়, পাথরও নয়, হাওয়াও নয়, ধোয়াও নয় কিছুই নয়। কেননা বিজ্ঞান বলছে এই দুনিয়ার যেখানে যা কিছু আছে সবই পদার্থ। তাই সত্যি সত্যিই যদি কাউকে অপদার্থ কাউকে বলতেই হয় তাহলে জীনদেরকে বলতে পারো। রুপকথার পরীদেরও বলা যায়। কেননা দেখতে শুনতে তারা যেমনই হোক দুনিয়ার তাদেরকে দেখতে পাওয়া যায় না। তার মানে হল দুনিয়ায় যা কিছু রয়েছে তাই হল পদার্থ। আর পদার্থকে দুনিয়ার সৃষ্টিকর্তার তৈরী নিয়ম মানতে হয়। দুনিয়ার নিয়ম কানুন - এগুলো আবার কি?
যেমন ধরো, একটা নিয়ম হল সমস্ত পদার্থেরই একটা না একটা ওজন থাকতে বাধ্য। তাই লোহাই বলো, তুলোই বলো আর হাওয়াই বলো, সব কিছুরই কিছু না কিছু একটা ওজন আছে। কিংবা আর একটা নিয়মকে টানাটানির নিয়ম বলতে পার। কেননা, এই নিয়ম অনুসারে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডের সমস্ত পদার্থই অন্য পদার্থদেরকে নিজের দিকে টানছে। এই যে টান বৈজ্ঞানিকরা একে বলেন মাধ্যাকর্ষণ। আর এর নিয়মকেই বলে মাধ্যাকর্ষণের নিয়ম। আর এই নিয়মের কারনেই আমরা খাট থেকে গড়িয়ে পড়ে গেলে মাটিতে পড়ে ব্যাথা পাই কিন্তু আকাশে উড়ে যাইনা। গাছের আমটা মাটিতেই পড়ে, উপরে অনন্ত অসীমের দিকে যাত্রা করে না। কেননা পৃথিবী আমটাকে নিজের দিকে টানছে। আবার মাধ্যাকর্ষনের নিয়ম অনুযায়ী, গাছের আমটাকে যেমন পৃথিবী টানছে তেমনি আমটাও পৃথিবীকে টানছে। তবে পৃথিবীটা অনেক বড় বলে নড়চড় হচ্ছে না, বড়জোর গাছের তলার ধূলো গুলোর একটু অস্বস্তি হচ্ছে। আর আমটা ছোট বলে পৃথিবী তার কান ধরে হিড় হিড় করে নিজের খপ্পরে টেনে নিয়ে আসছে। তাহলে, বুঝতেই পারছো, যে কোন দুটো পদার্থের মধ্যে পরস্পরের দিকে যে আকর্ষন তাকে তাকেই বলে মাধ্যাকর্ষন। তাই বলে ডাংগুলি খেলার দিকে আদির যে আকর্ষন কিংবা আদির কানের দিকে তার মামার আকর্ষণ মোটেই মাধ্যাকর্ষণ নয়।

পরের পর্ব পড়তে ক্লিক করো এখানে
 
মূল লেখকঃ দেবীদাস মজুমদার
লেখার সময় কালঃ ১৯৬০ সাল
সম্পাদনা, পরিবর্তন, পরিবর্ধন ও পরিমার্জন

মারুফ মাহমুদ, ঢাকা কলেজ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন