রবিবার, ৬ জুন, ২০২১

বিদ্যুতের কথা – About Electricity

বিদ্যুতের কথা,About Electricity,

বিদ্যুতের কথা About Electricity

প্রথমে দুটো ছোটো পরীক্ষা করে হাতে-নাতে দেখে নাও বিদ্যুৎ বলে ব্যাপারটা আসলে কী।।

প্রথম পরীক্ষা

ছোট্ট এক টুকরো ছিপি কিংবা সিগারেটের রাংতার ছোট্ট একটা বল সুতো দিয়ে ঝুলিয়ে দাও তারপর একটা ছোট কাঁচের রড যোগাড় করে এই রডটাকে ওই ঝোলানো বলটার কাছে নিয়ে যাও, দেখবে কিছুই হচ্ছে না রড আর বল কেউই কারো তোয়াক্কা করছে না কিন্তু তারপর বেশ খানিকক্ষণ ধরে এক টুকরো সিল্কের কাপড়ের ওপর কঁচের রঙটাকে ঘষো তারপর সেটাকে নিয়ে যাও সুতোয় ঝোলানো বলোটার কাছে দেখবে, কী দারুণ একটা পার্থক্য তৈরী হয়েছে : ঘষার পর কাচের রডটা বলটাকে টানতে শুরু করেছে কিন্তু কাচের রডটাকে এইবার বলটার গায়ে ঠেকিয়ে দাও, দেখবে আবার সব গণ্ডগোল হয়ে গেলো, রডটা এবার বলটাকে ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে

দ্বিতীয় পরীক্ষা

কাচের লাঠির বদলে এক টুকরো গালার লাঠি নাও দেখবে, এমনিতে সুতোয় ঝোলানো বলটার সঙ্গে তার কোনো সম্পর্ক নেই, কিন্তু গালাটাকে খানিকক্ষণ ফ্লানেল কিংবা একটা বেড়ালের গায়ে ঘষে নিলে পর একেবারে অন্য ব্যাপার। আগের মতোই বলটার কাছাকাছি নিয়ে গেলে বলটাকে টানে, বলটার গায়ে ঠেকিয়ে দিলে বলটাকে ঠেলে দূর করে দিতে চায় কিন্তু ফ্লানেলে-ঘষা গালার লাঠিটা সরিয়ে এইবার সিল্কে-ঘষা কঁচের লাঠিটা বলটার কাছে আনো, দেখবে বলটাকে ঠেলে সরিয়ে দেওয়া তো দূরের কথা, কঁচের লাঠিটা তাকে টেনে ধরে রেখেছে!

তাহলে মানতেই হবে, ঘষা খাবার দরুন ওই কাচের লাঠি আর গালার লাঠির মধ্যে একটা কোনো নতুন গুণ বর্তেছে বৈজ্ঞানিকদের ভাষায় এই নতুন গুণটার নাম হলো বিদ্যুতের চার্জ বা electric charge এই চাজের দরুনই হালকা জিনিসকে আকর্ষণ করা গেলো কিন্তু দুটো পরীক্ষা করতে বললাম কেন?

বিদ্যুতের চার্জ আসলে দুরকম : এক রকমের নাম দেওয়া হয় পজেটিভ, আর এক রকমের নাম দেওয়া হয় নেগেটিভ প্রথম পরীক্ষাটায় পজেটিভ, দ্বিতীয়টায় নেগেটিভ

তা না হয় বোঝা গেলো কিন্তু ওই রকম একবার টানাই বা কেন আর একবার ঠেলাই বা কেন?

তার কারণ এই দুরকম বিদ্যুতের চার্জের নিয়ম হলো এই যে একই ধরনের চার্জ পরস্পরকে যেন সইতে পারে না, ঠেলে সরিয়ে দেয় অথচ উলটো ধরনের চার্জ পরস্পরকে যেন খুব ভালোবাসে, কাছে টেনে নেয় এইবার পরীক্ষা দুটোর কথা বুঝতে পারা যাবে

প্রথম পরীক্ষায়, সিল্কে-ঘষা কাঁচে পজেটিভ, বিদ্যুৎ তৈরী হল; বলটার গায়ে এই লাঠিটা ঠেকানোর সঙ্গে সঙ্গে খানিকটা পজেটিভ বিদ্যুৎ লাঠি থেকে বলটায় চলে গেলো তখন বল আর লাঠি দুয়ের মধ্যেই পজেটিভ, ইলেকট্রিক চার্জ, তাই দুজনে পরস্পরকে ঠেলে সরিয়ে দিচ্ছে ফ্লানেলে-ঘষা গালার লাঠিটায় নেগেটিভ ইলেকটিক চার্জ; বলটার গায়ে সেটা ঠেকালে বলটার মধ্যে খানিকটা নেগেটিভ, ইলেকট্রিক চাজ চলে গেলো আর তাই তখন গালার লাঠি আর বল দুয়ের মধ্যেই নেগেটিভ ইলেকট্রিক চাজদুজন পরস্পরকে ঠেলে দিচ্ছে এই অবস্থায় কিন্তু যদি সিল্কে-ঘযা কাচের লাঠিটা বলটার কাছে আনো তাহলে তখন বলটার মধ্যে গালার লাঠি থেকে পাওয়া নেগেটিভ, চার্জ আর কাঁচের লাঠিটার মধ্যে পজেটিভ চার্জ। তাই তারা আর পরস্পরকে ঠেলে সরিয়ে দেয় না, কাছে টেনে রাখে কিন্তু কথা হলো, সিল্কের টুকরোয় কাঁচ ঘষলে পজেটিভ, চার্জই বা জন্মায় কেন আর ফ্লানেলের টুকরোয় গাল ঘষলে নেগেটিভ চার্জই বা জন্মায় কেন?

অর্থাৎ, পজেটিভই বলে আর নেগেটিভই বলে, বিদ্যুৎটা আসছে কোথা থেকে? এই প্রশ্নর জবাবটা বড়ো কঠিন ভালো করে বুঝতে গেলে বিজ্ঞান বিচিত্রার দ্বিতীয় বইটা পড়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে সেখানে অণুর চেয়েও ক্ষুদে পরমাণুদের কথা ফলাও করে বলার সময় দেখানো হয়েছে স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিটি পরমাণুর ভিতর পজেটিভ আর নেগেটিভ চার্জ থাকেঠিক যতোটা পজেটিভ, চার্জ ততোটাই নেগেটিভ চার্জ : পজেটিভ চার্জিত কণা রয়েছে মাঝখানে (প্রোটন) আর নেগেটিভ চার্জিত কণা (ইলেকট্রন) তার চারপাশে বনবন করে ঘুরছে সাধারণ অবস্থায় প্রত্যেক পরমাণুর মধ্যে দুরকম চার্জ সমান বলেই পরমাণুটা নিরপেক্ষ অর্থাৎ পজেটিভেরর দিকেও ঝোঁক নেই, নেগেটিভের দিকেও নেই কিন্তু সিল্কের ওপর কাঁচটা ঘষার দরুন ওই কাঁচের কিছু নেগেটিভ চার্জ কাঁচ ছেড়ে সিল্কের টুকরোয় চলে গেলো ফলে দলে ভারী হল পজেটিভ চার্জ আর তাই তাদের জেদ বজায় রইলো মোটের ওপর কাঁচটায় পজেটিভ চার্জ দেখা দিলো আর ঘষার চোটে কাঁচ ছেড়ে যে-নেগেটিভ চার্জ বেরিয়ে গেলো সে গিয়ে আড্ডা গাড়লো সিল্কের টুকরোয় তাহলে দেখতেই পাচ্ছে, এই বিদ্যুৎ উৎপন্ন হওয়া ব্যাপারটায় কোন অদ্ভুত কোন জিনিস এর জন্ম হয়নি। মূলত এটা একটা লেনদেনের ব্যাপার মাত্র।

তাই ঘষাঘষি করে একটা কিছুর মধ্যে যখন পজেটিভ বিদুৎ জন্মাচ্ছে তখন অন্য আর একটা কিছুর মধ্যে জন্মাচ্ছে নেগেটিভ বিদ্যুৎ আর পরিমাণের দিক থেকে দুইই সমান তার মানে এর মধ্যে যতোখানি পজেটিভ, বিদ্যুৎ দেখা দিলো ওর মধ্যে দেখা দিলে ঠিক ততখানিই নেগেটিভ বিদ্যুৎ কিন্তু এইবার মনে হচ্ছে তুমি হাই তুলতে শুরু করবে কেননা কথাগুলো ভয়ানক খটোমটো হয়ে দাঁড়াচ্ছে তাই আমি ভাবছি বিদ্যুতের কথা এখন আর থাক পরে বিজ্ঞান বিচিত্রার অন্য একটা বইতে আরো ফলাও করে একথা বলা যাবে আপাতত তোলা যাক আলোর কথা

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন