বৃহস্পতিবার, ১৩ জানুয়ারী, ২০২২

টিম বার্নার্স লি ও ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর অজানা কথা (বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা)

 

টিম বার্নার্স লি, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর অজানা কথা, বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা Pdf Download, রাগিব হাসান, Tim Berners-Lee and World Wide Web

টিম বার্নার্স লি ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর অজানা কথা (বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা) - Tim Berners-Lee and World Wide Web

ইন্টারনেট ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব। আজকের বিশ্বে এই ইন্টারনেট আর নানা ওয়েবসাইট ছাড়া জীবনযাত্রাকে চিন্তা করা একেবারেই অসম্ভব। ফেইসবুক, গুগল, ইনস্টাগ্রাম অ্যামাজন থেকে শুরু করে উইকিপিডিয়া, মোবাইল ব্যাংকিং, অনলাইন শপিংসবকিছুই সম্ভব। হয়েছে বিশ্বজোড়া আন্তর্জাল তথা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব (World Wide Web)-এর কারণে।

১৯৯১ সালে জন্ম নেওয়ার পরে ২৭ বছরে বিশ্বের যে পরিবর্তন হয়েছে, তা অভাবনীয়১৯৯১-এর আগের পৃথিবীর কাউকে এখনকার জগতে এনে দিলে তার সাথে প্রাচীনকালের মানুষের বিশেষ পার্থক্য থাকবে না হয়তোকারণ ইন্টারনেট ওয়েব আমাদের জীবনটাকে পুরোই পাল্টে দিয়েছে অল্প সময়েই। ইন্টারনেটের সাথে জড়িত সব প্রযুক্তির উদ্ভাবক সেই প্রযুক্তির ওপরে কোম্পানি খুলে বিলিয়নিয়ার হয়েছেন। গুগল বা ফেসবুকের কথাই ধরা যাকসার্চ কিংবা সোশ্যাল নেটওয়ার্ক প্রযুক্তির ওপরে এই দুই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত, এদের মালিক সের্গেই ব্রিন বা ল্যারি পেইজ এবং মার্ক জাকারবার্গ এখন বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের মালিক, বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকার শুরুতেই তাদের নাম। কিন্তু এই সবকিছু যার ওপরে দাঁড়িয়ে আছে, সেই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব যিনি উদ্ভাবন করেছেন, তিনি থেকে কত টাকা কামিয়েছেন? হয়তো ভাবছেন তিনিও বিলিয়নিয়ার। কিন্তু না, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব প্রযুক্তির উদ্ভাবক যিনি, তিনি অকাতরে জনসাধারণের উপকারের জন্য এই প্রযুক্তি সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন। যার কারণে আজ আরও অবাধে ইন্টারনেট ওয়েব ব্যবহার করতে পারিসারা বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে গেছে ওয়েব। এক হিসাবে দেখা যায়, ওয়েব প্রযুক্তিকে পেটেন্টের বেড়াজালে আবদ্ধ রেখে যদি ইনি ব্যবসায় নামতেন, তাহলে এত দিনে তিনি ট্রিলিয়ন ডলারের মালিক হতে পারতেনবিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি বিল গেটস বা জেফ বেজোসের চেয়ে ১০ গুণ ধনসম্পদের মালিক হতেন। কিন্তু নির্লোভ এই মানুষটি তা করেননি; বরং মানুষের কাছে তথ্য পৌছে দেওয়ার এই প্রযুক্তি তিনি সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এই মহানুভব ব্যক্তিটির নাম টিম বার্নার্স-লি (Tim Berners Lee) ইনি একজন ব্রিটিশ কম্পিউটারবিজ্ঞানী প্রযুক্তিবিদ। 

হাইপারটেক্সট : শুরুটা যেখানে

শুরুতেই একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে দিই। ইন্টারনেট আর ওয়েব প্রযুক্তি আসলে এক না। সারা বিশ্বের সর্বত্র কম্পিউটার গুলোকে নেটওয়ার্কের মাধ্যমে সংযুক্ত করার প্রযুক্তিটি হলো ইন্টারনেট। ডেটা আদান-প্রদানের নানা প্রটোকল বা পদ্ধতির উদ্ভাবনের মাধ্যমে ১৯৬০ এর দশক থেকে ইন্টারনেটের যাত্রা শুরু। প্রথমে ইন্টারনেটে কেবল যুক্ত ছিল বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষণাগার মার্কিন সেনাবাহিনীর নানা ল্যাব এ। প্রথম দিকের দুই দশকে ইন্টারনেটে কেবল ছিল -মেইল, ইউজনেট বা নিউজগ্রুপ ফাইল ট্রান্সফারের নানা অ্যাপ্লিকেশন। আমরা এখন যাকে কথ্য ভাষায় ইন্টারনেট বলে থাকি, সেটা আসলে ইন্টারনেটের ওপরে ভিত্তি করে তৈরি করা আরেকটি অ্যাপ্লিকেশন, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব বা বিশ্বজোড়া অন্তর্জাল। এর মাধ্যমে ইন্টারনেটকে ব্যবহার করে আমরা নানা ওয়েবসাইট দেখতে পারি আমাদের ফোন কিংবা কম্পিউটারের ওয়েব ব্রাউজারে। ব্যাপারটাকে এভাবে ভাবতে পারেনইন্টারনেট হলো রেললাইন, আর ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব হলো সেই রেললাইনের ওপরে ভিত্তি করে তৈরি করা ট্রেন যোগাযোগ ব্যবস্থা। ১৯৮৯ সাল অবধি ইন্টারনেটের প্রয়োগ কেবল সীমাবদ্ধ ছিল গুটি কয়েক ব্যবহারকারীর মধ্যে। নিউজগ্রুপ, -মেইল এসবি ছিল মুখ্য। কিন্তু তথ্য আদান-প্রদান করার ভালো কোনো ব্যবস্থা ছিল না। অন্যদিকে হাইপার টেক্সট (Hyper Text)-এর ধারণাটা বহুদিন আগে থেকেই চালু ছিল তথ্যবিজ্ঞানীদের মধ্যে। ১৯৪৫ সালে ভ্যানেভার বুশ এমন একটি যন্ত্রের কথা ভেবেছিলেন, যেখানে সব তথ্য আলাদা ডকুমেন্ট বা নথিতে লিপিবদ্ধ থাকবে, আর এক ডকুমেন্ট থেকে সম্পর্কিত অন্যান্য ডকুমেন্টে গিয়ে খুব সহজেই তথ্য খুঁজে বের করা যাবে। এই এক শব্দ থেকে অন্য ডকুমেন্টে যাওয়ার পদ্ধতির নাম হলো হাইপারটেক্সটএটি হলো এক ডকুমেন্টকে লিংকের মাধ্যমে আরেকটি ডকুমেন্টে যুক্ত করার ব্যবস্থা। সীমিত আকারে সফটওয়ারের মধ্যে সেটা করা হলেও বিশ্বজুড়ে বিস্তৃত রকম হাইপারটেক্সট সিস্টেমের কথা কারও মাথায় আসেনি, রকম উচ্চাভিলাষী প্রজেক্ট হাতে নেওয়ার সাহসও কেউ করেননি।

ব্যাপারটাকে পাল্টে দিলেন বার্নার্স-লি। আসুন, শোনা যাক তার গল্প

ভুলোমনের কম্পিউটার প্রোগ্রামার টিম বার্নার্স-লির জন্ম ইংল্যান্ডের লন্ডনে, ১৯৫৫ সালের জুন। বাবা মা দুজনই কম্পিউটারবিজ্ঞানী প্রোগ্রামার। বাবা কনওয়ে বার্নার্স লি ছিলেন ইংল্যান্ডের প্রথম কম্পিউটার মার্ক--এর উদ্ভাবকদের একজন। আর মা মেরি লি উডস ছিলেন গণিতবিদ এবং মার্ক- কম্পিউটারের প্রথম প্রোগ্রামারদের একজন। বাবা-মায়ের পরিচয়ই হয়েছিল ইংল্যান্ডের প্রথম এই কম্পিউটারের ওপরে কাজ করতে গিয়ে। এহেন পরিবারের সন্তান টিম বার্নার্স-লি ছোটবেলা থেকেই তাই কম্পিউটারের সাথে ছিলেন পরিচিত। বাবা-মা দুজনেই গণিতবিদ হওয়ায় পরিবারটির সবাই গণিত নিয়ে আগ্রহী ছিলখাবার টেবিলে গাণিতিক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা হতো নিয়মিত। টিম বিশ্বখ্যাত অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। সেখান থেকে প্রথম শ্রেণিতে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক ডিগ্রি পান ১৯৭৬ সালে। অবশ্য মন পড়ে ছিল কম্পিউটারের জগতেইবিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র থাকা অবস্থাতেই পুরোনো ইলেকট্রনিকসের দোকান থেকে একটা টিভি কিনে তার সাথে কিছু মাইক্রোচিপ লাগিয়ে বানিয়ে ফেলেছিলেন একটা ছোটখাটো কম্পিউটার। পাস করার পরে পদার্থবিজ্ঞানে ক্যারিয়ার না গড়ে বেছে নেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং। ১৯৮০ সালে যোগ দেন ইউরোপের পারমাণবিক গবেষণা সংস্থা সিইআরএন (CERN)-এ। সেখানকার কম্পিউটার সিস্টেম দেখাশোনার কাজটা ছিল তার হাতে। টিমের অবশ্য বেশ ভুলোমন, প্রায়ই ভুলে যেতেন। কোথায় কোন তথ্য আছে। তাই তথ্য মনে রাখার জন্য বানালেন একটা সফটওয়্যার। এনকোয়ার নামের এই সফটওয়্যারে নানা শব্দ লিখে রাখা যেত একটা ডকুমেন্টে। বিভিন্ন শব্দ বেছে নিলে সে-সংক্রান্ত তথ্যটুকু ডেটাবেইজ থেকে বের করে এনে দেখাত। অবশ্য এই প্রজেক্ট আর বেশিদূর আগায়নি, কারণ টিম সিইআরএন ছেড়ে অন্যত্র কাজ শুরু করেন। ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জন্ম হতে লাগবে আরও বছর।   

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েবের জন্ম

১৯৮৪ সালে সিইআরএন ফিরে এলেন টিম বার্নার্স-লি। মাঝের বছর কয়েক কম্পিউটার নেটওয়ার্কিংসহ প্রোগ্রামিংয়ের অনেক কিছুতে ব্যাপক দক্ষতা অর্জন করেন। ১৯৮৯ সালের দিকে টিম পুরোনো সমস্যাটায় ফিরে গেলেনকীভাবে তথ্যকে খুব সহজে সবার কাছে পৌছে দেওয়া যায়। সিইআরএন তখন ইউরোপের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট নোডসিইআরএন এর প্রচুর কম্পিউটার ইন্টারনেটে যুক্ত আছে, তবে তারা কেবল ব্যবহৃত হচ্ছে -মেইল আর ফাইল আদান-প্রদানের কাজে। তথ্যকে কেন্দ্রীয় একটা ডেটাবেইজে রাখলে তা দিয়ে একটা সার্চ ইঞ্জিনের মতো বানানো সম্ভব। কিন্তু সমস্যা হলো একেক জায়গার একেক কম্পিউটারে সেই জায়গা বা বিজ্ঞানীদের কাজের তথ্য আছে। সব তথ্যকে কেন্দ্রীয়ভাবে জড়ো করা বেশ কঠিন। আর বিজ্ঞানীরা প্রতিনিয়ত তথ্য হালনাগাদ করছেন। কাজেই এতগুলো কম্পিউটার থেকে নিয়মিতভাবে কেন্দ্রীয় ডেটাবেইজে তথ্য আনা-নেওয়া করা সম্ভব না কিছুতেই।

টিমের মনে পড়ল তার সেই এনকোয়ার প্রোগ্রামের কথা। একটু পড়াশোনা করে বুঝতে পারলেন, হাইপারটেক্সট এই সমস্যার সমাধান করে দিতে পারে। যে কম্পিউটারে যে তথ্য আছে, সেখানেই থাকুক। দরকার কেবল এক কম্পিউটারে রাখা তথ্য অন্য কম্পিউটার থেকে দেখতে পাওয়া। আর এক তথ্যের ডকুমেন্ট থেকে অন্য ডকুমেন্টে কোনো লিংক অনুসরণ করে যাওয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। তাহলে একটি ডকুমেন্ট পড়ার সময়ে পাঠক চাইলেই সেই ডকুমেন্টের নানা শব্দের ওপরে ক্লিক করে চলে যেতে পারবেন সম্পর্কিত আরেক ডকুমেন্টে, সেটা যে কম্পিউটারেই থাকুক না কেন। আইডিয়াটা দারুণ। কিন্তু এর জন্য কাজ করতে হবে অনেক। টিম প্রপোজাল দিলেন এই প্রজেক্টের ফান্ডিং আনার জন্য। কিন্তু সিইআরএন এর কর্তৃপক্ষ ব্যাপারটা ঠিক বুঝতেই পারল না। তবে টিমের ভাগ্য ভালো, তার বস টিমের জন্য অত্যাধুনিক NeXT নামের কম্পিউটার কেনার ব্যবস্থা করে দিলেন। অ্যাপল থেকে সদ্য বিতাড়িত স্টিভ জবস এই কম্পিউটার কোম্পানিটা খুলেছিলেনকম্পিউটারগুলো ছিল বেশ শক্তিশালী সেই সময়ের হিসাবে।

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব তৈরির জন্য টিম বার্নার্স-লির প্রাথমিক প্রস্তাবনা - বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা Pdf Download, রাগিব হাসান, Tim Berners-Lee and World Wide Web

 

ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব তৈরির জন্য টিম বার্নার্স-লির প্রাথমিক প্রস্তাবনা (১৯৮৯)

টিম এবার নেমে পড়লেন কাজে। বুঝলেনতিনটা কাজ করা লাগবে। প্রথমে ঠিক করতে হবে কীভাবে নানা ডকুমেন্টে বা পেইজে মার্কআপ করা হবে, মানে ডকুমেন্টের কোনো শব্দ যদি লিংক হয়, তাহলে কীভাবে সেটাকে লিংক হিসেবে চিহ্নিত করবেন, কীভাবে সেই লিংকে গেলে কী নতুন পাতা খুলবে, তা সেট করবেন, এসবের সংকেত। টিম জন্য একটা আস্ত নতুন ভাষা লিখে ফেললেন, যার নাম দেওয়া হলো Hyper Text Markup Language (HTML) এই ভাষাতেই লেখা হতো এবং এখনো লেখা হয় ওয়েবপেইজ। এর পরের কাজটা হলো একটা সার্ভার লেখা যার কাজ হলো এই ওয়েবপেইজ গুলোকে জমা করে রাখা এবং কেউ চাইলে পেইজ এবং তার ছবি অনান্য কিছু পাঠানো। সে জন্য একটা প্রটোকল বা ডেটা আদান-প্রদানের পদ্ধতি বানাতে হলো। সেটার নাম দিলেন Hyper Text Transfer Protocol (HTTP) আর সবার শেষে বানালেন একটা ওয়েব ব্রাউজার, যার দিয়ে এই সাইটগুলোতে যাওয়া যায়। কোনো লিংক বেছে নিলে নতুন পাতাটিকে সার্ভার থেকে নিয়ে এনে দেখানো হয় কম্পিউটারের স্ক্রিনে।

ব্যস, তিনটি জিনিস, এইচটিএমএল নামের ভাষা, এইচটিটিপি নামের পাতা আদান-প্রদানের প্রটোকল বা সার্ভার এবং পাতাগুলো দেখার জন্য ব্রাউজারএগুলো তৈরি হয়ে যাওয়া মাত্র টিম পেয়ে গেলেন তার সমস্যার সমাধান। নানা কম্পিউটারে ওয়েব সার্ভার চালু করা হলো, তথ্যগুলো গুছিয়ে রাখা হলো নানা ওয়েবসাইটে, আর ব্রাউজার দিয়ে দেখা গেল সেসব পাতা। হাইপারটেক্সটের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন ভ্যানেভার বুশ ১৯৪০-এর দশকে, সেটাকেই বাস্তবে রূপ দিলেন টিম।

পৃথিবীর প্রথম ওয়েব সার্ভার - CERN-এ টিম বার্নার্স-লির ব্যবহৃত নেক্সট কম্পিউটার - বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা Pdf Download, রাগিব হাসান, Tim Berners-Lee and World Wide Web

 

চিত্র ৪৩ : CERN- টিম বার্নার্স-লির ব্যবহৃত নেক্সট কম্পিউটার। এই কম্পিউটারেই তৈরি হয় ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব আর ১৯৯১ সালে এটিতেই হোস্ট করা হয় পৃথিবীর প্রথম ওয়েব সার্ভার।

 

পৃথিবীর প্রথম ওয়েবসাইট

কাজ শুরুর পরে দুই বছর কেটে গেছে। ১৯৯১ সালের আগস্ট চালু করা হলো বিশ্বের প্রথম ওয়েবসাইট। info.cern.ch ঠিকানার এই সাইটে খুব বেশি কিছু ছিল না। তখনো ছবি দেখানোর ফিচার যোগ করা হয়নি। অল্প কিছু লেখা আর কিছু লিংক দেওয়া ছিল, যেখানে এই ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব জিনিসটা কী, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছিল। খুব সাধারণ চেহারার এই সাইটটাই শুরু করল ওয়েবভিত্তিক ইন্টারনেট বিপ্লব, যা পাল্টে দিল বিশ্বকে।

পৃথিবীর প্রথম ওয়েবসাইট -বিশ্বের প্রথম ওয়েবসাইট—info.cern.ch -বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা Pdf Download, রাগিব হাসান, Tim Berners-Lee and World Wide Web

 

বিশ্বের প্রথম ওয়েবসাইট—info.cern.ch

টিম তার এই ওয়েবসাইটের কথা সবাইকে জানালেন নানা নিউজগ্রুপ মেইলিং লিস্টের মাধ্যমে। সাড়া পড়ে গেল সারা বিশ্বের প্রযুক্তিবিদ কম্পিউটারবিজ্ঞানীদের মধ্যে। টিমের লেখা সার্ভার ইনস্টল করে রাতারাতি সারা বিশ্বের সর্বত্র শুরু হয়ে গেল অসংখ্য ওয়েবসাইট আর অল্প কিছু দিনের মধ্যেই ওয়েবে এল ছবি, শব্দ ভিডিও যোগ করার ব্যবস্থা। শুরু হয়ে গেল ওয়েববিপ্লব।

মহানুভব টিম। এবারে সবাই প্রশ্ন করল টিম বার্নার্স-লিকে, এই প্রযুক্তিটিকে পেটেন্ট করে নিয়ে ব্যবসা করবেন কি না। সারা বিশ্বে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে পারে এই প্রযুক্তি থেকে আয় হবে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। কাজেই এই প্রযুক্তি যদি টিম পেটেন্ট করে সবার কাছ থেকে লাইসেন্স ফি আদায় করেন, তাহলে রাতারাতি বিশাল ধনী হয়ে যাবেন তিনি। কিন্তু সবাইকে অবাক করে দিয়ে টিম বললেন, উনি এই ওয়েব প্রযুক্তিটি সবার জন্য সম্পূর্ণ বিনা মূল্যে বিলিয়ে দিতে চান। পাগল নাকি লোকটা? ভাবল সবাই। কিন্তু টিম অনড়। ওয়েব প্রযুক্তির কেন্দ্রে থাকা এইচটিএমএল, এইচটিটিপি নামের প্রটোকল সার্ভার এবং ব্রাউজার কোডসবই রেখে দিলেন ইন্টারনেটে, আর এসব যে সবার জন্য চিরকাল উন্মুক্ত থাকবে, তাও নিশ্চিত করলেন। তথ্যের অধিকার সব মানুষেরকোনো কোম্পানি সেই অধিকার ছিনিয়ে নিতে পারে না, ছিল টিমের দৃঢ় বিশ্বাস। টিমের এই মহানুভবতার কারণেই খুব দ্রুত ওয়েব প্রযুক্তি ছড়িয়ে গেল সারা বিশ্বে। টিম ১৯৯৪ সালে শুরু করলেন ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব কন্সোর্শিয়াম (W3C), যার কাজ হলো ওয়েবের নানা বিষয়ের দেখাশোনা করা। সিইআরএন এর চাকরি ছেড়ে চলে এলেন ম্যাসাচুসেটস ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজিতে, সেখান থেকেই W3C-এর কাজকর্ম চালাতে থাকলেন। বলাই বাহুল্য, ওয়েবকে ভিত্তি করে নানা অ্যাপ কিংবা সাইট বানিয়ে ফেসবুকের মার্ক জাকারবার্গ কিংবা গুগলের প্রতিষ্ঠাতাদের মতো অনেকেই কোটি কোটি ডলার কামিয়ে নিয়েছেন, কিন্তু টিম? ওয়েবের উদ্ভাবন থেকে এক পয়সাও আয় করেননি টিমবরং সব সময় চেয়েছেন ওয়েব হোক সারা বিশ্বের মানুষের জ্ঞানার্জনের এবং সেই জ্ঞান দিয়ে মুক্তির উপায়।

ওয়েব প্রযুক্তির বিশ্বজয় টিম বার্নার্স-লির সেটা এই বিশ্বের চেহারাকে পাল্টে দিয়েছে সম্পূর্ণ। কয়েক বছর আগে একদল বিজ্ঞানী, সমাজতাত্ত্বিক, গবেষক শিক্ষক বা শিল্পী মিলে বিশ্বকাপানো ৮০টি ঘটনার তালিকা করা হয়েছিল, যা মানবসভ্যতাকে পাল্টে দিয়েছে চিরতরে এর মাঝে সবার ওপরে আছে টিম বার্নার্স-লির উদ্ভাবিত ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব। টিম এই ওয়েবের জন্য অর্থ উপার্জন করে ধনকুবের হননি, কিন্তু নিজের জীবদ্দশাতেই দেখছেন এখনো, কীভাবে তার এই উদ্ভাবনটি সারা বিশ্বকে এগিয়ে নিয়েছে। অজস্র সম্মান পেয়েছেন টিম, ইংল্যান্ডের রানীর কাছে পেয়েছেন নাইটহুড, স্যার খেতাব। পেয়েছেন কম্পিউটার বিজ্ঞানের সর্বোচ্চ পুরস্কার টুরিং এওয়ার্ড। আরও কত-কী! কিন্তু টিম এখনো ভাবেন, বিশ্বাস করেন মনেপ্রাণে, বিশ্বের কয়েক কোটি মানুষের একসাথে যোগাযোগ করতে পারাটাই তার সর্বোচ্চ প্রাপ্তি। মহানুভব টিম বার্নার্স-লি তাই আজও কাজ করে চলেছেন, নীরবে নিভৃতেই, ওয়েবকে মুক্ত আর জনমানুষের সম্পদ হিসেবে টিকিয়ে রাখার লড়াইটা চালাচ্ছেন আজও।

Tags: টিম বার্নার্স লি, ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব এর অজানা কথা, বিজ্ঞানীদের কাণ্ডকারখানা Pdf Download, রাগিব হাসান, Tim Berners-Lee and World Wide Web 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন