শনিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০২২

বেনজিন অণুর গঠন আবিষ্কার - (স্বপ্ন থেকে আবিষ্কার) Discovery of the structure of Benzene molecules

বেনজিন অণুর গঠন আবিষ্কার - Discovery of the structure of Benzene molecules - ফ্রেডরিক অগাস্ট কেকুল
বেনজিন অণুর গঠন আবিষ্কার - Discovery of the structure of Benzene molecules - ফ্রেডরিক অগাস্ট কেকুল


বেনজিন অণুর গঠন আবিষ্কার - Discovery of the structure of Benzene molecules

বেনজিন অণুর গঠন - ফ্রেডরিক অগাস্ট কেকুল (১৮২৯-১৮৯৬)  

১৮২৫ সালে মাইকেল ফ্যারাডে (Michael Faraday) বেনজিন নামক জৈব যৌগটি সংশ্লেষণ করেন। তিনি এর নাম দেন বাইকারবুরেট অফ হাইড্রোজেন (bicarburet of hydrogen) পরে ১৮৩৩ সালে বিজ্ঞানী  ইলহার্দ মিশারলিখ  (Eilhard Mitscherlich) বেনজয়িক এসিড (Benzoic acid - C6H5COOH) চুন (CaO) পরিস্রুত করে এটি প্রস্তুত করেন। তিনি এর নাম দেন বেনজিন। এদিকে বেনজিনের পারমাণবিক গঠনগত সঙ্কেত কি হবে সে নিয়ে জার্মান রসায়ন শাস্ত্রবিদ অগাস্ট কেকুল (Friedrich August Kekulé) ভাবনাচিন্তা করতে শুরু করেন।

জৈব যৌগ মুক্ত শৃঙ্খল বা অ্যালিফ্যাটিক বদ্ধ শৃঙ্খল বা অ্যারোমেটিক এই দুই ভাগে বিভক্ত। বেনজিনের মধ্যে থাকে টি কার্বন ছটি হাইড্রোজেন পরমাণু। কিন্তু এই কার্বন সারি মুক্ত শৃঙ্খল না বদ্ধ শৃঙ্খল অর্থাৎ বেনজিন কি ধরনের যৌগ সেটা তিনি কিছুতেই বের করতে পারলেন না।

১৮৯০ সালে বেনজিন রিং (Benezene Ring) গঠন আবিষ্কারের ২৫তম পূর্তিতে এটি আবিষ্কারের রহস্য নিয়ে মুখ খোলেন কেকুলে। তখনই এক মজার ঘটনা সম্পর্কে জানা যায়। কেকুলের ভাষ্যমতে, ১৮৬৫ সালের দিকে তিনি এক রাতে হঠাৎ স্বপ্নে দেখেন, দুটি পরমাণু নেচে নেচে একটি অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে গেল। এই দৃশ্য দেখার পর সেদিন তাঁর ঘুম ভেঙে গেল। তবে বিষয়টিকে স্বপ্ন বলে উড়িয়ে না দিয়ে তিনি দ্রুত খাতা-কলম নিয়ে বসে পড়লেন। তারপর স্বপ্নের পরমাণুর নাচার স্কেচ আঁকতে শুরু করলেন। নাহ, তাতে বেনজিন সমস্যার কোনো সমাধান হল না।

কিছুদিন পরের ঘটনা। একদিন চেয়ারে বসে বই পড়তে পড়তে তিনি ঘুমিয়ে পড়লেন। সে অবস্থাতেই আরেকটি স্বপ্ন দেখলেন। এবার আরও পরিষ্কারভাবে কিছু দেখলেন তিনি। আবারও সেই পরমাণুর নাচ। তবে এবার দেখলেন, অনেকগুলো পরমাণু সর্পিলাকারভাবে চতুর্দিক ঘিরে একসাথে নাচছে। পরমাণুগুলো নাচতে নাচতে একসময় শুরুর পরমাণুটি সর্পিলাকার আকৃতির শেষ পরমাণুটিকে যুক্ত করে ফেলল। ঠিক যেন একটা সাপ নিজেই তার নিজের লেজ খেয়ে ফেলছে। ঘুম ভেঙে গেল বিজ্ঞানী কোকুলের।

 তাঁর এই স্বপ্নই রসায়নের জৈব যৌগের জন্য এক নতুর দরজা উন্মোচন করেছিল। এই স্বপ্ন থেকেই কেকুলের মাথায় বেনজিনের সাইক্লিক বা চাক্রিক গঠন এর ধারণা আসে।

তিনি ভাবতে লাগলেন তার এরকম স্বপ্ন দেখার কারণ কি?

হঠাৎ তার মনে হল বেনজিন অণুর গঠন নিশ্চয়ই বৃত্তাকার শৃঙ্খল এর মত। তিনি তখনই বসে গেলেন কাগজ কলম নিয়ে। পেয়ে গেলেন বেনজিনের গঠনগত সংকেত। তিনি আবিষ্কার করলেন বেনজিনের অণু গঠিত হয় কার্বন পরমাণুর মুক্ত শৃঙ্খলের প্রান্তগুলো পরস্পর যুক্ত হয়ে।

এরপর থেকেই আমরা জানি, বেনজিন ষড়ভূজাকৃতি রিংয়ে (বলয়ে) ছয়টি কার্বন আর ছয়টি হাইড্রোজেন থাকে। আর এই ছয়টি কার্বন পরমাণু রিংয়ের মতো পরস্পরের সঙ্গে যুক্ত থাকে এবং প্রতিটি কার্বনের সঙ্গে একটি হাইড্রোজেন পরমাণুও যুক্ত থাকে। শুধু কার্বন আর হাইড্রোজেন নিয়ে বেনজিন গঠিত বলে একে হাইড্রোকার্বনও বলা হয়। ছয়টি কার্বন মিলে হেক্সাগন বা ষড়ভুজ গঠন করে। একক আর দ্বিবন্ধনগুলোতে প্রতিটি কার্বন-কার্বন বন্ধনের ব্যাপ্তি সমান এবং বেনজিন রিংয়ের ওপরে সমতলে থাকা ডিলোকালাইজড ইলেকট্রন বেনজিনকে স্থায়িত্ব এনে দেয়। 

Tags: বেনজিন অণুর গঠন আবিষ্কার, স্বপ্ন থেকে আবিষ্কার, Discovery of the structure of Benzene molecules, ফ্রেডরিক অগাস্ট কেকুল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন