বৃহস্পতিবার, ১৫ জুলাই, ২০২১

লিউয়েন হুক এর পাগলামি – Madness of Antonie Philips van Leeuwenhoek

লিউয়েন হুক এর পাগলামি,Madness of Antonie Philips van Leeuwenhoek

লিউয়েন হুক এর পাগলামি Madness of Antonie Philips van Leeuwenhoek

আজ তোমাদের একটা নতুন যন্ত্রের সাথে পরিচয় করবো। বায়োলজি ল্যাবে তখন সবার চোখ অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দিকে। সবার মতো রাতিনও ল্যাবে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের দিকে তাকিয়ে থাকে। কেমন জানি যন্ত্রটি, চেহারাটা ঠিক বায়োলজি স্যারের মতো জটিল। কিভাবে এই যন্ত্র ব্যবহার করে কে জানে !

আজকে ল্যাবে তেলাপোকা কাটা হবে। আর তেলাপোকার নাড়ি-নক্ষত্র আমাদের দেখতে হবে এই যন্ত্রের সাহায্যে। কি মুশকিলে যে পড়লাম, মনে মনে ভাবলো রাতিন। কি আর করা করতেই হবে। হটাৎ করে স্যার বলল যে, থাক আজকে ল্যাব হবে না, গল্প হবে।

গল্পের কথা শুনে ক্লাস এর সবাই একসাথে চিৎকার করে উঠলো।

গল্পটা হবে মাইক্রোস্কোপ নিয়ে

কি বলে স্যার। সবাই একসাথে চুপ হয়ে গেল, হয়তো দিনটাই খারাপ আজকে

আচ্ছা রাতিন তুমি বলতো কে  মাইক্রোস্কোপের জনক?

প্রশ্ন শুনে রাতিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো

কিছুক্ষণ মাথা চুলকিয়ে রাতিন বলল জানি না স্যার

কেউ কি জানে এর উত্তর

সবাই চুপ।

ঠিক আছে তাহলে আমি বলি। প্রথমে কারও ইচ্ছা ছিল না এই গল্প শুনার। কিন্তু কি আর করার শুনতে তো হবে।

স্যার শুরু করলেন, লিউয়েনহোক, এই পাগল লোকটা বানিয়ে ছিল এই অণুবীক্ষণ যন্ত্র।

কি বলেন স্যার পাগল !!

হ্যাঁ খেয়ালি মানুষ ছিলেন তিনি, জীবিকা অর্জনের জন্য একটি চশমার দোকান খুলেছিলেন,কিন্তু চশমার দোকানের দিকে তার মন ছিল না।

তাহলে স্যার উনি কি করতেন?

চশমা বিক্রি বাদ দিয়ে কাঁচ ঘষেঘষে লেন্স তৈরি করতো ।

তাহলে তো স্যার নিশ্চয়ই তার ব্যবসা লাটে উঠেছিলো। বলে সবাই একসাথে হেসে উঠলো।

হ্যাঁ তা তো উঠেছিল কিন্তু এতে তার ক্ষতি না হয়ে বরং লাভই হয়ে ছিল।

বলতে পারো তার লাভ না, লাভটা আমাদের হয়েছিল

কিভাবে স্যার?

তা না হলে যে অণুবীক্ষণ যন্ত্রটি থাকতো না।

ক্লাস এর কারো হয়তো এই গল্প নিয়ে উৎসাহ ছিল না কিন্তু লিউয়েনহোকের উদাসীনতা সবাইকে যেন গল্পটার দিকে আকৃষ্ট করলো।

তার পরে স্যার কি হল?

হটাৎ একদিন তিনি দেখলেন যে, এই লেন্সের এর ভেতর দিয়ে ছোট জিনিসকে দেখলে বেশ বড় দেখায়।

কিভাবে সে এই জিনিসটা বুঝলো?

একদিন সে গাছের পাতা, ঘাস, ছোট ছোট কীটপতঙ্গ, প্রাণীর চামড়া, চুল প্রভৃতি লেন্সের মাধ্যমে দেখলেন, তখন সে এই বিষয়টা ধরতে পারলেন

তাহলে এইভাবে তিনি অণুবীক্ষণ যন্ত্র তৈরি করেন

না এরপর তিনি একদিন তামার নলের মধ্যে দুইটি লেন্স দিলেন,এভাবে তিনি তার পরীক্ষা চালিয়ে গেলেন।  বহু পরীক্ষার পর আবিষ্কার করলেন এই অণুবীক্ষণ যন্ত্র।

আবার একদিন তিনি বাগানের একটা ভাঙা টবে জমে থাকা পচা পানি এনে রাখলেন যন্ত্রের সামনে, অবাক হয়ে দেখলেন যে, সেই পচা পানিতে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র বিচিত্র ধরনের জীব কিলবিল করছে। পরপর বেশ কয়েকবার পানি এনে তিনি এই পরীক্ষাটি করেন এবং বুঝতে পারেন, পানিতে বেশ কিছু ক্ষুদ্র জীব বাস করে।

এবং এই যন্ত্রটির মাধ্যমে সেই অতি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পদার্থ দেখা যায় সহজে।

আর কোন পরীক্ষা করেননি তিনি

করেছে, কিন্তু পানি নিয়ে

শোন একদিন সে কি করলো

একটি পাত্রে কিছুটা ভালো পানি রেখে তাতে মরিচ ভিজিয়ে রেখে। পাঁচ থেকে সাত দিন পরে তিনি দেখলেন পানিতে জীবাণুর সংখ্যা বেড়ে গেছে। এরপর তিনি বুঝলেন যে, পানিতে অণুজীব নিজে থেকেই জন্মায়।

এর পর তো সে আর চুপ করে থাকলেন না।

কি করলেন তিনি?

সোজা এই পরীক্ষাগুলোর ফলাফল লিখে পাঠিয়ে দিলেন রয়েল সোসাইটিতে।

কিন্তু এইখানে এসে আসল ঝামেলাটা লাগলো।

কি ঝামেলা স্যার,উনি কি পরীক্ষায় কোন ভুল করেছিল ?

রাতিন বলার সাথে সাথে হেসে উঠলো সবাই।

না সে তোমাদের মতো ভুল করার মানুষ ছিলেন না কিন্তু সোসাইটির কর্মকর্তারা লিউয়েনহোকের পরীক্ষাকে পাগলামি ভেবে তারা উড়িয়ে দিয়েছিলেন।

তার পর তিনি কিভাবে অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কার করলেন !

এই রয়েল সোসাইটির কল্যাণে।

রয়েল সোসাইটির দু'একজন উৎসাহী সদস্য তার পাগলামি স্বচক্ষে দেখার জন্য উপস্থিত হলেন। লিউয়েনহোক খুশি হয়ে পরীক্ষাটি দেখালেন, বিস্মিত হলেন তারা। মরিচ ভিজানো পানি আর লিউয়েনহোকের তৈরি যন্ত্র নিয়ে এলেন রয়েল সোসাইটিতে। এবার তারা বুঝলো যে, মানুষটার মাথায় একটু পাগলামি থাকলেও একটি বিস্ময়কর যন্ত্রটির আবিষ্কারক কিন্তু তিনি।

তারপর স্যার

তারপর লিউয়েনহোকের নাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়লো

আমরা তারই পরীক্ষা থেকে বুঝতে সক্ষম হয়েছি যে এক ধরনের জীব পৃথিবীতে বাস করে, যাদের আমরা খালি চোখে দেখতে পারি না। এই অদৃশ্য জীবাণুরা পানিতে, গাছের পাতায়, ভেজা মাটিতে, মানুষের খাদ্যনালীতে এবং দাঁতের গোড়ায় বসবাস করে।

তোমরা কি জানো এখন প্রযুক্তির হাত ধরে অণুবীক্ষণ যন্ত্র স্মার্টফোনের একটি অংশ হতে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির (ইউসিএলএ)একদল গবেষক স্মার্টফোনে মাইক্রোস্কোপ বা অণুবীক্ষণ যন্ত্র সংযুক্ত করার লক্ষ্যে কাজ করছেন। এতে স্মার্টফোনের সাহায্যে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অণুজীব সহজে শনাক্ত করা যাবে।

সত্যি স্যার

হ্যাঁ।

ক্রিং ক্রিং করে ছুটির ঘণ্টা বেজে উঠলো। কখন যে সময় টা পার হয়ে গেল রাতিন বুঝল না

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন