মঙ্গলবার, ১৭ মে, ২০২২

কদম্ব গাছ ও কদম ফুল – বৃক্ষের কথা - হুমায়ূন আহমেদ – kadamba o kadam full – Brikkher kotha - Humayun Ahmed
কদম্ব গাছ ও কদম ফুল – বৃক্ষের কথা - হুমায়ূন আহমেদ – kadamba o kadam full – Brikkher kotha - Humayun Ahmed

 

কদম্ব গাছ কদম ফুলবৃক্ষের কথা - হুমায়ূন আহমেদ – kadamba o kadam full – Brikkher kotha - Humayun Ahmed

 

এসো করো স্নান

নবধারা জলে

এসো নীপবনে

ছায়াবীথি তুঙ্গে।

নীপবন হলো কদম্ব বন। কদম্ব নিয়ে রবীন্দ্রনাথের আহ্লাদের সীমা ছিল না।বাদল দিনের প্রথম কদম ফুলতার কাছে অন্য ব্যাপার। কদম ফুল বর্ষার আগমন বার্তার ফুল। প্রিয় তো হবেই।  

কালিদাসের মেঘদূত কাব্যের একটি শ্লোক (পূর্বমেঘ)

নিচে নামে গিরি সেখানে আছে

ভার শিখরে বিশ্রামে নামবে

তোমার স্পর্শের পুলকে

ফোটাবে যে নব কদম্বের খুচ্ছ।

(অনুবাদ : বুদ্ধদেব বসু)

 

শ্রী রাধিকার কৃষ্ণকে নিয়ে লীলাখেলার সবই কদম্ব গাছের নিচে। বলা হয়ে থাকে, কদম ফুলের হালকা সুবাস অদ্ভুত এক নেশা তৈরি করে। পুরুষ রমণী এই নেশায় একে অন্যের প্রতি অনেক বেশি আকর্ষণ বোধ করে।

আজকালকার তরুণ-তরুণীরা ফাস্টফুডের দোকানে সময় কাটাতে বেশি পছন্দ করে। তারা বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে কদম্ব তলে যেতে পারে।

বাংলাদেশের একজন ঔপন্যাসিকেরও কদম গাছ অতি প্রিয়। তিনি তাঁর নিভৃত নিবাসে একশ' কদমের চারা লাগিয়েছিলেন। তার স্বপ্ন, ভরা বর্ষায় তিনি কদম্ব বনে হাঁটবেন। দুঃখের ব্যাপার, অনেক চেষ্টা করেও তিনি কদম্ববন তৈরি করতে পারেন নি। চারটি গাছ শুধু শেষপর্যন্ত রক্ষা পেয়েছে। এরা বর্ষায় প্রচুর ফুল ফোটায়। 

কদম্বের নামকরণে আসা যাক।কত্শব্দের সঙ্গেঅম্বপ্রত্যয় যোগে ইয়েছে কদম্ব (কত্ +অম্বচ) কত্ শব্দের অর্থ বিবশতা। যা বিবশতা আনে।

কদম ফুল চিবিয়ে নেশা করার প্রচলন আদিবাসীদের মধ্যে আছে। কদমের ছাল ঘেঁচে খেলেও নাকি নেশা হয়। আমি এক বর্ষায় দু'টা কদম ফুল চিবিয়ে থু করে ফেলেছি। নেশা হয় নি, বমি হয়েছে।  

কদম ফল যে রান্না করে খাওয়া হয় এই তথ্য কি জানেন? আমি জানতাম। নলিনীকান্ত চক্রবর্তী ত্রিপুরার গাছপালায় লিখেছেন, কদমের ফল রান্না করে খাওয়া হয়, তবে সহজে হজম হয় না। যারা বিচিত্র রান্নায় উৎসাহী, তারা রান্না করে দেখতে পারেন। হজমের দায়দায়িত্ব আপনাদের। এখন আসি ভেষজ ব্যবহারে। বিভিন্ন ধরনের বইয়ে নানান ভেষজ ব্যবহারের উল্লেখ আছে। আমি শিবকালীর বইয়ের ভেষজ ব্যবহার প্রামাণ্য ধরে উল্লেখ করছি। তার প্রতি ঋণ স্বীকার করেই এগুচ্ছি।

হাইড্রসিলি (অণ্ডকোষ বৃদ্ধি)

গাছের ছাল বেটে অণ্ডকোষে লাগিয়ে কদমপাতা দিয়ে বেঁধে রাখলে ব্যথা ফোলা দুইই কমবে।

 

টিউমার বা অর্বুদে

কচি ছাল চন্দনের মতো বেটে লাগাতে হবে। লাগানোর আগে গরম করে নেয়া ভালো।

 

ক্রিমি হলে

কদমপাতার রস খাওয়ালে শিশুদের ক্রিমি বের হয়ে যায়। গ্রাম-বাংলায় এটি বহুল প্রচলিত চিকিৎসা। শিবকালি বলছেন, তিনি নিজে দেখেছেন এই চিকিৎসায় Round worm-এর সঙ্গে সূতা কিমি (Thread worm)- বের হতে।

 

স্টোমাটাইটিসে

শিশুদের মুখের ঘায়ে কদম পাতা সেদ্ধ পানি দিয়ে কুলকুচা করাতে হবে।

 

কদম্ব বা বুল কদম গাছের ইংরেজি নাম burflower tree, laran, Leichhardt pine, kadam.

কদম্বের বোটানিক্যাল নাম Anthocephalus indicus A, Rich, এই গাছ Rubiaceae ফ্যামিলিভুক্ত। বিখ্যাত সিনকোনা (কুইনাইন) গাছও একই পরিবারভুক্ত। সিনকোনার ছাল যেমন জ্বরের উপশম করে, কদম্বের ছালও করে। নওয়াজেশ আহমেদের বইয়ে পড়লাম, মালয়েশিয়াতে জ্বরের উপশমে এখনো ব্যবহার করা হয়।

ভারতবর্ষে দু'প্রজাতির কদম্ব দেখা যায়। ধারা কদম্ব (Anthocephaus indicus) কেলি কদম্ব (Adina cordifolia)

আয়ুর্বেদাচার্য শিবকালী ভট্টাচার্য কদমের রসায়নে লিখেছেনকদম্বে আছে দু'ধরনের অ্যাসিড - Quinonic acid এবং Cinchotanic acid, এই সঙ্গে আছে Tapoins, এরা কোথায় আছে ফলে না গাছে। তিনি বলেন নি। আমিও তথ্য সংগ্রহ করতে পারি নি।  

আমার মতে, কদম্বের সবচেয়ে বড় ভেষজ গুণ মন ভালো করে দেয়ার অদ্ভুত ক্ষমতা। পূর্ণ বর্ষায় এই গাছের নিচে দাড়ালে মনে হয়আহারে! বেঁচে থাকাই আনন্দের। এই গাছের রোগ সারাবার কোনো প্রয়োজন নেই। সে তার সৌন্দর্য নিয়েই ঝলমল করুক।

একটা কথা বলতে ভুলে গেছি। বর্ষা ছাড়াও কিন্তু কদম ফুল ফোটে। শরতে ফোটে। এমনকি শীতকালেও ফোটে। এক শীতে আমার সাংবাদিক বন্ধু সালেহ চৌধুরী আমাকে একগুচ্ছ কদম উপহার দিয়ে চমকে দিয়েছিলেন। 

Tags: কদম্ব গাছ, কদম ফুল, বৃক্ষের কথা, হুমায়ূন আহমেদ, kadamba, kadam full, Brikkher kotha, Humayun Ahmed, হাইড্রসিলি, অণ্ডকোষ বৃদ্ধি, স্টোমাটাইটিস, ক্রিমি হলে করণীয়,

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন