শুক্রবার, ২৩ জুলাই, ২০২১

লুই পাস্তুর ও পাস্তুরাইজেশন - Louis Pasteur and Discovery of Pasteurization

 

লুই পাস্তুর ও পাস্তুরাইজেশন,Louis Pasteur and Discovery of Pasteurization,পাস্তুরাইজেশন কি,পাস্তুরাইজেশন কে আবিষ্কার করেন,

লুই পাস্তুরপাস্তুরাইজেশন - Louis Pasteur and Discovery of Pasteurization

পনেরো বছরের একটি ছেলে। মেধাবী হলেও বাড়ির অবস্থা তত ভাল নয়। গ্রাম থেকে বন্ধুর সঙ্গে প্যারি এসেছে কলেজে পড়তে। প্যারিতে পড়ার জন্যে তার বন্ধুরা সব পাগল কিন্তু এখানকার জমকালো আবহাওয়া ছেলেটির একটুও ভাল লাগে না। বাড়ির জন্যে কেবল তার মন কাঁদে।

বাপের তার ট্যানারির ব্যবসাঅর্থাৎ কাঁচা চামড়া পাকা করা তাঁর কাজ। মা এক বাগানের মালীর মেয়ে। বাপ-মায়ের কথা ভেবে ভেবে ছেলেটার শরীর কাহিল হয়ে পড়ে। বন্ধুকে বলেঃ যদি আমাদের সেই ট্যানারির মিষ্টি গন্ধ একটু পেতাম তা হলে বুঝি শরীরটা চাঙ্গা হয়ে উঠত শোনো একবার এক পাগলা ছেলের কথা! ট্যানারির বোটকা গন্ধের জন্যে নাকি তার প্রাণ আনচান করে।

কিন্তু কথাটা মোটেই ঠাট্টা নয়। দেখতে দেখতে অবস্থা এমন হল যে কোনো কিছু খেতে রুচি হয় না, রাতে ঘুম আসে না। শেষকালে তার বাপ এসে ছেলেটাকে পারি থেকে নিয়ে গেলেন দেশে, ভর্তি করলেন বাড়ির কাছাকাছি এক কলেজে। সেই থেকে লুই পাস্তুর নামের এই ছেলেটি প্রতিজ্ঞা করল, তার মনকে আরও শক্ত করতে হবে।

বাড়ির কাছাকাছি এসে পড়াশোনায় সে এত ভাল করল যে ছোটখাট একটা চাকরি জুটে গেল কলেজে। বোনের কাছে চিঠিতে লিখলঃ খুব মন দিয়ে বাড়ির কাজকর্ম করবি কিন্তু। কাজে একবার মন বসলে কাজ না করে থাকা যায় না। আর কাজ ছাড়া তো দুনিয়ার সবকিছুই একেবারে অচল!

সত্যি, কাজ ছাড়া থাকেনি সে জীবনের একটি মুহূর্ত। এর পর ক্রমে ক্রমে মনের দুর্বলতা কাটিয়ে ফেলল পাস্তুর। আবার গেল প্যারিতে পড়তে। সেখানে বিখ্যাত রসায়নবিদ অধ্যাপক দুমা-র বক্তৃতা শুনে তাঁর জীবনের মোড় ঘুরে গেল। কী অপূর্ব বক্তৃতা, কী আশ্চর্য রহস্য রসায়নের! তার মন একেবারে মেতে উঠল রসায়নশাস্ত্র নিয়ে। অবশেষে কঠোর সাধনার স্বীকৃতি হিসেবে তাকে করা হল রসায়নবিদ্যার অধ্যাপক।

১৮৫৪ সালে লুই পাস্তুর বদলি হয়ে এলেন লিল শহরের সরকারি কলেজে রসায়নের প্রধান অধ্যাপক হিসেবে। বত্রিশ বছর বয়স তখন তাঁর। আঙুরের রস থেকে দামি দামি পানিয় ও মদ তৈরির জন্যে ফ্রান্স বিখ্যাত। অথচ মদের ব্যবসায়ীরা পড়েছেন মহা বিপদে। একটু পুরনো হলেই মদ টক হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপায় খুঁজতে তারা এলেন পাস্তুরের কাছে। নানা প্রশ্ন নিয়ে ভাবতে লাগলেন তিনি। ফলের রস থেকে কেমন করে তৈরি হয় মদ? মদ থেকে সিরকা হয় কী করে? মদ রেখে দিলে টক হয়ে যায় কেন?

অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে রেখে তিনি পরীক্ষা করলেন ভাল মদ আর টকে যাওয়া মদ। পরীক্ষা করতে করতে বুঝলেন এক ধরনের জীবাণুই ফলের রস থেকে মদ তৈরির জন্যে দায়ী। চোখে দেখা যায় না এই জীবাণুদের। এমনি আরেক জাতের জীবাণু মদকে টকিয়ে নষ্ট করে দিচ্ছে। তিনি দেখলেন দুধ যে টক হয়ে নষ্ট হয়ে যায় তাও এক ধরনের জীবাণুরই কাজ। পাস্তুর এই জীবাণুদের কাবু করার উপায়ও বাতলালেন। বললেন, মদকে ১২০ ডিগ্রী ফারেনহাইট তাপে খানিকক্ষণ গরম করতে হবে। তা হলেই ক্ষতিকর জীবাণু নষ্ট হবে, মদ রেখে দিলে আর টক হবে না। তার এই কায়দায় দুধ যাতে টক না হয়ে যায় তার জন্যে জ্বাল দিয়ে নেওয়াকে আজও বলা হয় পাস্তুরাইজ করা।

পাস্তুরই প্রথম প্রমাণ করলেন, কোনো জিনিস পচে যাওয়া বা গেঁজে যাওয়ার মূলে রয়েছে আসলে অতি ছোট ছোট জীবাণু কোনো তরল জিনিস থেকে যদি সব জীবাণু নষ্ট করে ফেলা যায় আর সেটা রাখা হয় জীবাণুমুক্ত হাওয়ার সংস্পর্শে তা হলে তা আর পচবে না সেকালের রসায়নবিদরা তার একথা মানতে চাইলেন না। বিশ বছর ধরে তারা তুমুল বিতর্ক চালিয়ে গেলেন তাঁর বিরুদ্ধে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পাস্তুরেরই জিত হল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন